মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত

অর্থ কেলেঙ্কারির প্রথম মামলায় মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে আদালত দোষী সাব্যস্ত করছেন।

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিলের (ওয়ানএমডিবি) অর্থ কেলেঙ্কারি মামলায় কুয়ালালামপুরে মঙ্গলবার উচ্চ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজিম মোহাম্মদ গাজ্জালি তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন।

তিনি বলেন, “এ মামলার সমস্ত তথ্যপ্রমাণ বিচার করে দেখা গেছে, প্রসিকিউশন তাদের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।”

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মামলায় বিশ্বাসভঙ্গ, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে।

রায়ের সবগুলো ধারাতেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে নাজিবের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ৪২ মিলিয়ন রিঙ্গিত স্থান্তরিত হয় বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি মামলার শুনানিতে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেছিলেন; বলেছিলেন, আর্থিক উপদেষ্টারা তাকে ভুল বুঝিয়েছেন।  

তবে বিচারক তার রায়ে সবগুলো ধারাতেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। 

এই সাত ধারার প্রত্যেকেটিতে নাজিব রাজাকের ১৫ থেকে ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে মালয়েশিয়ার আইনে। তবে তার আইনজীবীরা সাজা ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছেন।

এদিকে নাজিব রাজাক বলেছেন, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

এই মামলার বিচারকে মালয়েশিয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং আইনের শাসনের জন্য একটি ‘পরীক্ষা’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে। তাছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির রাজনীতিতেও এই রায়ের প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৯ সালে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ওয়ানএমডিবি নামে এই সার্বভৌম ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাজিব। কিন্তু ২০১৫ সালে ব্যাংক ও বন্ডহোল্ডারদের পাওনা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর ওই তহবিল নিয়ে প্রশ্ন শুরু হয়।

আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর তদন্তকারী অন্যতম দেশ যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের পর তারা জানায়, এই তহবিলের ৪৫০ (সাড়ে চারশত) কোটি ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে।  

‘মালয়েশিয়ার এক নম্বর কর্মকর্তা’ হিসেবে চিহ্নিত এক ব্যক্তি ওয়ানএমডিবি থেকে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গ্রহণ করেছেন বলে সে সময় জানান মার্কিন তদন্তকারীরা। পরে জানা যায়, ওই ‘ব্যক্তি’ নাজিব রাজাক।

এর মধ্যে ওই তহবিলের ৪ কোটি ২০ লাখ রিংগিত (১ কোটি ডলার) নাজিবের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের ঘটনায় গতবছর ৩ এপ্রিল এ মামলার বিচার শুরু করে মালয়েশিয়ার আদালত।